By E.H. GOMBRICH
Chapter-1 Once Upon A Time
এক
একদা এক সময়
সবগুলো গল্পই শুরু হয়
‘একদা এক সময়’ দিয়ে। একদা এক সময় যা কিছু ঘটেছিল তা নিয়েই এই গল্প। একসময় তুমি এত
ছোট ছিলে যে খুব ছোট একটা কিছুর মধ্যেও তুমি দাড়িঁয়ে যেতে পারতে। তোমার মায়ের হাত
পর্যন্তও তুমি পৌছঁতে পারতে না। তোমার কি মনে পড়ে? তোমার নিজের গল্পটা এমন হতে
পারে: ‘একদা এক সময় তুমি খুব ছোট্ট একটি ছেলে ছিলে, অথবা একটি মেয়ে- এবং সেই ছোট্ট
ছেলেটা আমি।‘ কিন্তু তুমি যখন দোলনার একটি শিশু ছিলে তার পূর্বের কথা কি তোমার মনে
পড়ে? তুমি এটা মনে করতে পারবে না কিন্তু তুমি জান যে এটা সত্য ছিল। তোমার বাবা মাও
এক সময় ছোট্ট ছিল। এবং অনেক অনেক দিন আগে তোমার দাদা দাদুও। তুমি আরো আগের দিনের
কথা ভাবতে পারো। এভাবে যে দিনের কথাই ভাবনা কেন তার পূর্বে আরও কিছু ছিল। তুমি কি
কখনও দুটি আয়নার মধ্যে দাড়িঁয়েছিলে। না দাড়িয়ে থাকলে তোমার একবার তা করা দরকার।
তুমি দেখতে পেতে তোমার অনেকগুলো ছবি। একটি থেকে অপরটি ছোট, যত দুরে থাকবে তত বেশি
ছোট। কিন্তু এর কোন শেষ হবে না।
এবং এটাই হল একদা এক
সময়। যার কোন শেষ দেখা যায় না। দাদার দাদার দাদার দাদার দাদার..........মাথা নষ্ট
হয়ে যাবে ভাবতে ভাবতে।
যত পেছনেই যাওনা কেন তারও একটা একদা এক সময় থাকবে।
এটা একটা তলাবিহীন
কুয়ার মত। নিচের দিকে যতই তাকাও ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে? আমার কাছে তাই মনে হয়। একটা
ছিড়ে কাগজে আগুন লাগিয়ে কুয়োতে ফেলে দিই। ধীরে ধীরে এটা নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে,
আরও গভীরে, আরও গভীরে। আগুনের আলোতে কুয়োর পাশগুলো দেখা যাচ্ছে। তুমি কি দেখতে
পাচ্ছ? এটা অনেক গভীরে চলে যাচ্ছে। এটা এখন এত গভীরে প্রবেশ করেছে দেখতে অন্ধকারে
একটা ছোট্ট তারার মতো মনে হচ্ছে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে আলোটা... এবং এখন আর নেই।
আমাদের স্বরণশক্তিটাও
এই জলন্ত ছেড়া কাগজটার মতো। আমরা অতীতের আলো জ্বালানোর জন্য এটা ব্যবহার করি।
প্রথমে আমরা নিজেরা জানি, অত:পর পুরানো লোকদের জিজ্ঞাসা করি তাদের কি মনে আছে।
তারপর আমরা মৃত লোকের লিখিত চিটিগুলো খুঁজি। আর এভাবেই আমরা অতীতের আলো জ্বালাই।
অনেক বিল্ডিং শুধুমাত্র পুরানো লোকদের
বিভিন্ন লেখালেখিতে ভর্তি হয়ে আছে যাদেরকে আর্কাইভ বলে। সেগুলো তুমি হাজার হাজার
বছর আগের লোকদের লেখাও পাবে। আর্কাইভে আমি একবার একটা চিটি পেয়েছিলাম যেখানে
শুধুমাত্র লেখা আছে: প্রিয় মা, গতকাল আমরা কিছু চমৎকার ট্রাফেলস খেয়েছিলাম, লাভ
ফ্রম উইলিয়াম।‘ উইলিয়াম ছিল ইতালির এক ছোট্ট প্রিন্স যে চারশ বছর আগে এ লিখা
লিখেছিল। ট্রাফেলস হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের মাশরুম।
কিন্তু আমরা শুধুমাত্র
একদৃষ্টি দেখতে পাই। কারণ অন্ধকার কুয়াটার মধ্যে আমাদের আলোটা এখন খুবদ্রুত পড়ে
যাচ্ছে। এক হাজার বছর....পাঁচ হাজার বছর...দশ হাজার বছর। সে দিন গুলোতেও ছোট্ট
ছোট্ট শিশুরা ছিল। তারাও ভাল ভাল খাবার খেতে পছন্দ করত। কিন্ত তারা চিঠি লিখতে
পারতো না। বিশ হাজার বছর... পঞ্চাশ হাজার বছর
তখনও লোকেরা বলত ‘একদা এক সময়’। এবং আমরা এখন জানি তারও অনেক অনেক আগে পর্বতসমূহ এখনকার মত
ছিল না। কিছু কিছু ছিল অনেক অনেক বড় বড়। ধীরে ধীরে বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে
সেগুলো এখন পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু হয়ত তখন ছিল না, ধীরে ধীরে সমূদ্রথেকে লক্ষ লক্ষ বছরের ব্যবধানে এসব তৈরী হয়েছে।
এ বড় বড় পর্বতের
পূর্বে অনেক প্রাণী ছিল যেগুলো দেখতে এখনকার প্রাণীদের মত ছিল না। ড্রাগনের মত
অনেক বিশাল আকৃতির ছিল। আমরা কিভাবে এসব জানলাম? গভীর খনন কাজ করার সময় আমরা সেসব
প্রানীর হাড় পেয়েছি। যখন আমি ভিয়েনার স্কুল ছাত্র ছিলাম আমি প্রাকৃতিক ইতিহাস
জাদুগরে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি ডিপলোডুকাস নামের এক প্রাণীর অনেক বড় কঙ্কাল দেখেছিলাম। কি বিদঘুটে এক নাম ডিপলোডুকাস। কিন্তু প্রাণীটি ছিল আরো
বেশি বিদঘুটে। প্রাণীটি একটু রুমে জায়গা হচ্ছিল না। এটা ছিল লম্বা গাছের মত বড়।
এটার লেজ ছিল ফুটবল মাটের অর্ধেকের সমান। কি মারাত্নক শব্দটাই না এটা করত! জঙ্গল
দিয়ে হাঁটার সময় এটা নি:শ্চয়ই সবকিছু দুমড়ে মুচড়ে নিয়ে যেত।
কিন্তু আমরা এখনও
শুরুতে পৌঁছাইনি। আরও অনেক পেছনে যেতে হবে। বলতে এটা অনেক সহজ কিন্তু একটু ভেবে
দেখ। তুমি কি জান তখন এক সেকেন্ড কতক্ষণে হতো? এক সেকেন্ড সময়ে এক, দুই, তিন পর্যন্ত
গুনা যেত। কল্পনা কর এক হাজার মিলিয়ন বছর আগের কথা। সে সময় কোন বড় প্রাণী ছিল না,
শুধুমাত্র শামুক বা পোকার মত কিছু জীব ছিল। তারও আগে কোন গাছপালাই ছিল না। পুরো
পৃথিবীটা ছিল আকারহীন এবরো থেবরো। কিছুই ছিল না এখানে। গাছপালা, ঝোপঝাড় কিছুই না।
এমনকি কোন ঘাস, ফূল, একটু সবুজ কিছুই না। সমুদ্রগুলো ছিল খালি, সেখানে কোন পানি,
মাছ কিছুই ছিল না। বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন বছর ধরে জীবনহীন, পানিশুন্য এ গ্রহ সূর্যের
চারপাশে ঘুর্ণায়মান ছিল। তারও আগে, চন্দ্র , সূর্য কিছুই ছিল না। কিছু অদ্ভূদ
নক্ষত্র, ছোট ছোট স্বর্গীয় টুকরা গ্যাসীয় মেঘমালা ছিল অসীম এ মহাশুন্যে।
‘একদা এক সময়’- সবকিছু
কেমন যেন মনে হচ্ছে! চল সূর্য, পৃথিবী, সুন্দর সমূদ্র, গাছপালা, শামুক, ডাইনোসর
এসবের মধ্যে ফিরে যাই। মনে হয় ঘরে ফিরে আসলাম। তাই না? আর পেছনে আমরা যাব না।
তলাহীন অতীতে আর হাতরে না মরে এখনই থামি। ‘থাম, কি হয়েছিল তখন?’
কিভাবে তা ঘটেছিল?
আমরা ইতিহাসের কথা বলছি। শুধুমাত্র একটি গল্প না, আমাদের গল্প। এটাকে আমরা পৃথিবীর
ইতিহাস বলতে পারি। আমরা কি শুরু করতে পারি?
No comments:
Post a Comment