The Story of the World- What is Archaeology?



আর্কিওলজি কি?
আগের দিনের লোকজনের লিখে যাওয়া বিভিন্ন চিটি বা অন্যান্য লিখা পড়ে আমরা তাদের সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু এটা ইতিহাস তৈরী করার একটা পদ্ধতি।
অনেক অনেক দিন আগে লোকজন কিভাবে লিখতে হয় তাও জানতো না। তারা একে অন্যেক কাছে চিটি লিখে নি। রাজা মনুমেন্টে কোন গল্প খোদাই করে রাখেনি। যেসব লোক লিখতে জানতো না ইতিহাসবিদরা কিভাবে তাদের সম্পর্কে জানবে?
কল্পনা কর অনেক দিন আগে নদীর পাশে একটি গ্রামে কিছু লোক বাস করত। এই লোকগুলো কিভাবে লিখতে হয় তা জানতো নাতারা তাদের বন্ধুর কাছে কোন চিটি লিখেনি। অথবা তাদের দৈনন্দিন জীবনের কোন ডাইরী নেই। কিন্তু তারা যখন প্রতিদিন তাদের কাজে যেত তখন তারা কিছু জিনিস মাটিতে ফেলে দিত। একজন কৃষক গমের ক্ষেতে কাজ করার সময় লোহার একটি কোদাল হারিয়ে ফেলেছিল। সে এটা আর খুঁজে পায় নি। হারিয়ে যাওয়া কোদালটি আর না খুঁজে সে আরেকটা কোদাল ব্যবহার শুরু করল।
এদিকে বাড়িতে তার স্ত্রী ভুল করে একটি মাটির পট ফেলে দিয়েছে। এটা  ভেঙে টুকরা হয়ে গেছে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পটের টুকরাগুলোকে লাথি দিয়ে ঘরের বাইরে ফেলে এসেছে। তার বাচ্চা মাটির ষাঁড় আর গুরুর গাড়ি দিয়ে খেলছিলতার মা তাকে ডাক দিল আর ওমনি সে গরুর গাড়ি আর মাটির ষাঁড়ের কথা ভুলে মায়ের কাছে ছুটল। মা তাকে আবার নতুন খেলনা এনে দিল। উত্তেজনায় সে ষাঁড় আর গরুর গাড়ির কথা ভুলে গেল। পরদিন তার বাবা যাচ্ছে মাঠে কাজ করতে দুর্ঘটনাক্রমে পায়ের লাথি খেয়ে কিছু ময়লা তার গাড়িটার উপর গিয়ে পড়ল। গাড়িটি ময়লার নিচে পড়েই রইল।
চল এখন কল্পনা করি গ্রীষ্ম ক্রমেই শুষ্ক থেকে শুষ্কতর হচ্ছে। গমগুলো মরত শুরু করেছে। এই গ্রামের লোকজন কম থেকে আরো কম খেতে পারছে। তারা একত্রিত হল এবং সিদ্ধান্ত নিল এ গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে। যাওয়ার সময় তারা অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ফেলে গেল। ভাঙা কলসি, ভোঁতা ছুড়ি, ইত্যাদি।
নির্জন গ্রামটা নদীর পাশে অনেক বছর রয়ে গেল। ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তুপে ধুলো বালি জমল। এক বছর সেখানে বন্যা হয়ে সবকিছু ভাসিয়ে দিল আর তার উপর সব কাদা, মাঠি জমল। ফলে একদিন তুমি এই বসতি এলাকাটাকে আর চিনতেই পারছোনা। মনে হচ্ছে এখানে কখনো কোন গ্রাম ছিল না। ধ্বংস এলাকায় একদিন ঘাসে ভরে উঠল। এখন যে কেউ দেখলে এটাকে নদীর পাশে একটি মাট বলেই মনে করবে।
কিন্তু একদিন এক লোক নদীর কিনারে আসল। ঘাসের উপর উঁকি দেয়া ছোট্ট একটা কাঠের টুকরা তার নজরে পড়ল। একটু ঝুঁকে কাঠের উপর থেকে সে ময়লাগুলো পরিষ্কার করে ফেলল। এটা একটা বাড়ির কোণা। এটা দেখে সে নিজে নিজে ভাবল, ‘এখানে কি কোন সময় লোকজন বাস করত!’
পরদিন তিনি আরো বিশেষ কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসলেন। ছোট শাবল, ব্রাশ, বিশেষ ধরনের ছুরি। তিনি মাঠের আরো গভীরে খনন করতে থাকলেন। যখন তিনি ঘরবাড়ির আরো কিছু ভগ্নাংশ পেলেন সেসব থেকেও ময়লা পরিস্কার করলেন। যা কিছু পেলেন তাই তিনি লিখে ফেললেন। তারপর তিনি সেগুলো সতর্কতার সহিত পরীক্ষা করলেন। তিনি নদীর পাড়ে যেসব লোক বাস করত তাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করলেন।
একদিন তিনি সেখানে একটি লোহার শাবল পেলেন যেটা কৃষক একদিন মাঠে হারিয়ে ফেলেছিলেন।এখন তিনি বুঝতে পারলেন এখানকার লোক মাটি থেকে কিভাবে কাদার জিনিস বানাতে হয় তা জানত। যখন তিনি ছোট বাচ্চাটির হারানো ষাঁড় এবং গরুর গাড়িটি পেল তখন তিনি বুঝলেন এখানকার লোকেরা গরু ব্যবহার করত তাদের চাষের কাজে সাহায্য করার জন্য।
তিনি হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন লোকগুলো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখান থেকে চলে গিয়েছিল। তিনি তাদের ফেলে যাওয়া অনেক কিছু আবিষ্কার করলেন। যখন তিনি তাদের ফেলে যাওয়া কিছু শক্ত গম পেলেন তখন হয়ত তিনি চিন্তা করলেন,’ আমি বাজি ধরতে পারি এই এলাকার লোকজন বৃষ্টি না হওয়াতে এখান থেকে এমন এলাকায় চলে গিয়েছেন যেখানে একটু বেশি বৃষ্টিপাত হয়।‘
এই লোকটি আসলে ইতিহাস করছেন-যদিও তার কাছে লিখিত কোন চিটি বা অন্য কোন ডকুমেন্টস নেই। তিনি লোকজনের গল্প আবিষ্কার করছেন তারা যে জিনিসগুলো ফেলে গিয়েছিল সেগুলো থেকে। এই ধরনের ইতিহাসকে বলে আর্কিওলজি। আর যে ইতিহাসবিদ মাটি থেকে খনন কাজের মাধ্যমে এই ইতিহাস তৈরী করেন তাকে বলে আর্কিওলজিস্ট।

No comments:

Post a Comment