উত্তম দর কষাকষি

এক ভদ্রলোক সকালে অফিসে যাচ্ছেন। তার হাতে একটি বড় বাঁধানো ছবি। লোকটি একটি দোকানের সামনে গিয়ে বললো,' আপনি কি দয়া করে আমার এ ছবিটি কিছু সময়ের জন্য রাখতে পারেন? আমি বিকালে অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে যাবো।'
ভদ্রলোকের কথা দোকানদার না করতে পারলো না।
বলল, ' অবশ্যই, এ উপকারটা আমি আপনার জন্য করতে পারি।'

একজন অতৃপ্ত মানুষ

এক্সট্রামাদুরা গ্রামে এক ধনী লোক ছিল। তার মতো ধনী ও গ্রামে আর কেউ ছিল না। তার গরু, মহিষ, ঘোড়া ও আঙ্গুর বাগান ছিল। তার ঘর ছিল অনেক বড় আর সুন্দর। তার আঙ্গুর বাগানে প্রচুর আঙ্গুর ফল ছিল। তার গরু মহিষ ছিল অনেক মোটা মোটা। এক্সট্রামাদুরাতে তার ঘোড়াগুলো ছিল সবচেয়ে সুন্দর।
তার আরো অনেক কিছুই ছিল। তার ভালো একটি বৌ এবং ভালো সন্তান ছিল। মানুষ প্রত‍্যাশা করে এমন সবকিছুই তার ছিল। কিন্তু লোকটি সন্তুষ্ট ছিল না।
সে তার সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট ছিল না, তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট ছিল না, এমনকি তার স্রষ্টার প্রতি ও সন্তুষ্ট ছিল না।
আবহাওয়ার উপর ও সে ছিল অসন্তুষ্ট।
যদি ঠাণ্ডা পড়ত তখন সে বলতো, ' এত ঠান্ডা! এটা আঙ্গুর বাগানের জন্য ভালো আবহাওয়া নয়।'
যদি বৃষ্টি হতো তাহলে বলতো, ' বাতাসে বেশি আদ্রতা, আমার রোদের প্রয়োজন ছিল।'
আর যখন রোদ হত, তখন ও সে অসন্তুষ্ট হতো।
আজ বেশি গরম, কাল বেশি ঠাণ্ডা, অন‍্যদিন বেশি আদ্র এভাবে বলেই যেত।
একদিন সে তার আঙ্গুর বাগানে ঢুকল। সেখানে ছিল খুব সুন্দর সুন্দর আঙ্গুর। এত বেশি এবং ভালো আঙ্গুর এক্সটামাদুরার কোথাও ছিল না। কিন্তু এতেও সে সন্তুষ্ট ছিল না।
সে বলল আঙ্গুরগুলো খুব ছোট ছোট। আবহাওয়া খারাপ ছিল। কখনো বেশি ঠাণ্ডা, কখনো বেশি গরম।
ঠিক সেই সময় আঙ্গুর বাগানে খুব সুন্দর এবং লম্বা একটা লোক আসলো। সে লোকটি বলল, ' তুমি কখনও আবহাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেনা। কখনো গরম, কখনো ঠাণ্ডা, কখনো আদ্র, কখনো শুষ্ক। তুমি কি নিজের মনের মতো করে আবহাওয়াকে তৈরি করে নিতে পারবে?
'হ‍্যাঁ, পারবো', ধনী লোকটি উত্তর দিল।  আমি সঠিক ভাবে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
'ঠিক আছে।' বলল আগুন্তক। এই বছর তুমি তোমার মনের মতো করে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এটা বলে আগুন্তক অদৃশ্য হয়ে গেল।
দেখতে দেখতে পরবর্তী বছর চলে আসলো। মার্চ মাস। ধনী লোকটি বলল, 'এখন আমার তুষার দরকার'। সাথে সাথে বরফ পড়া শুরু হলো। তারপর আসল এপ্রিল। এখন আমার বৃষ্টি প্রয়োজন। শুরু হলো বৃষ্টি। খুব চমৎকার। বলল ধনী লোকটি।
এরপর তার চাহিদা মত গরম আসলো। লোকটি যখন যা চাইছিল তাই হচ্ছিলো। লোকটি এখন তার আঙ্গুর বাগান আর আবহাওয়া দুটোর প্রতি সন্তুষ্ট।
তার বাগানের আঙ্গুর এখন সবচেয়ে সুন্দর। লোকটি বলল আমার বাগানের আঙ্গুর এখন এক্সটামাদুরার সেরা আঙ্গুর। এত সুন্দর ফল সে আর কখনও দেখেনি।
অবশেষে বসন্ত আসলো ফল কাটার সময় শুরু হলো। লোকটি বাগানের কয়েকটি আঙ্গুর ফল খেয়ে দেখল।
'একি! এ যেন ভিনেগারের মত টক!'
'এত টক আঙ্গুর ফল আমি জীবনেও দেখিনি।'
ঠিক সেই মুহূর্তে আগের সে আগুন্তক এসে হাজির হলো।
'এ বছর তুমি তোমার মনের মতো করে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছো। তোমার আঙ্গুরের কি খবর?' বলল আগুন্তক।
'খারাপ, খুব খারাপ!' মন খারাপ করে লোকটি উত্তর দিল।
'আঙ্গুরগুলো ভিনেগারের চেয়েও বেশি টক।'
এবার আগুন্তক বলল। আমি বুঝতে পেরেছি।
তুমি তোমার আঙ্গুর বাগানে সঠিক সময়ে ঠাণ্ডা, বৃষ্টি, রোদ, আদ্রতা সব সরবরাহ করেছিলে। কিন্তু তুমি বাতাসের কথা ভুলে গিয়েছিলে।

মুরগির গল্প

একদিন এক মুরগির বাচ্চা হাঁটতে হাঁটতে জংগলে চলে গেল। জংগলে তার মাথার ওপর একটি ওক গাছের ফল পড়ল। বেচারা মুরগির বাচ্চা বলল, 'আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!' আমি যাই রাজাকে খবরটা দিয়ে আসি। এই বলে সে হাঁটতে শুরু করল।
পথে তার সাথে একটা মুরগির দেখা হলো।
মুরগিটি বাচ্চা মুরগিকে জিজ্ঞাসা করল, ' তুমি কোথায় যাচ্ছো?
মুরগির বাচ্চা বলল, 'ওহ! আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। রাজার কাছে যাচ্ছি খবরটা দিতে।'
মুরগি বলল, ' তুমি যদি চাও আমাকে ও নিয়ে যেতে পারো।
ঠিক আছে চল। এবার দুজনেই আবার হাঁটতে শুরু করল।
পথে যেতে যেতে দেখা হলো এক হাঁসের সাথে।
হাঁসটি মুরগিকে জিজ্ঞাসা করল,' তোমরা কোথায় যাচ্ছো?'
মুরগি উত্তর দিল, ' বেচারা বাচ্চা মুরগিটার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা খবরটা দিতে রাজার কাছে যাচ্ছি।'
হাঁস বলল, 'তোমরা যদি চাও তাহলে আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যেতে পারো।'
ঠিক আছে চল। মুরগির বাচ্চা, মুরগি, হাঁস একসাথে চলতে শুরু করল।
পথে যেতে যেতে তাদের সাথে দেখা হলো এক টার্কির।
টার্কি হাঁসকে জিজ্ঞাসা করল, ' তোমরা সবাই মিলে কোথায় যাচ্ছো?'
হাঁস উত্তর দিল, ' ওহ! বেচারা মুরগির বাচ্চার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা যাচ্ছি রাজাকে খবরটা দিতে।'
ও আচ্ছা, বলল টার্কি মাথা দুলিয়ে। 'তোমরা যদি চাও তাহলে আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যেতে পারো।
ঠিক আছে চল। এবার মুরগির বাচ্চা, মুরগি, হাঁস, টার্কি একসাথে দল বেঁধে চলতে শুরু করল।
যেতে যেতে দেখা হলো এক রাজ হাঁসের সাথে।
রাজহাঁস এত বড় দল হাঁটতে দেখে বলল, ' তোমরা সবাই মিলে কোথায় যাচ্ছো?'
টার্কি বলল, ' মুরগির বাচ্চার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা যাচ্ছি রাজাকে খবরটা দিতে।'
ও আচ্ছা, বলল রাজহাঁস। তোমরা যদি চাও তাহলে আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যেতে পারো।'
ঠিক আছে চল। এবার মুরগির বাচ্চা, মুরগি, হাঁস, টার্কি, রাজহাঁস একসাথে চলতে শুরু করল। বেচারা পশুরা রাজাকে খবরটা দিতে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কেউ রাজা কোথায় থাকে তা জানতো না।
এবার তাদের সাথে দেখা হলো এক শেয়ালের। শেয়ার বলল তোমরা কোথায় যাচ্ছো? রাজহাঁস বলল,' মুরগির বাচ্চার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা যাচ্ছি রাজাকে খবরটা দিতে।'
শেয়ার একটু ভেবে বলল, ' চল আমি তোমাদের রাজার কাছে নিয়ে যাব।'
তারা খুশিমনে শেয়ালের পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো। শেয়ার তাদের সাথে মিথ্যা কথা বলেছিল। সে তাদেরকে তার গুহায় নিয়ে গেল। তারপর শেয়াল এবং তার বাচ্চারা মিলে মুরগির বাচ্চা, মুরগি, হাঁস, রাজহাঁস, টার্কি সহ সবাইকে মজা করে খেয়ে ফেলল।
বেচারা মুরগির বাচ্চা, তার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে, এ খবরটি আর রাজাকে দিতে পারল না।

This story is taken from
Project Gutenberg's An Elementary Spanish Reader, by Earl Stanley Harrison
Name of the story: El cuento del Pollo

পর্বতের গল্প


ছেলে  আর বাবা পর্বতের উপর দিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ ছেলে পড়ে গেল। প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে চিৎকার করে উঠল। আহঃ।
তাকে অবাক করে দিয়ে পর্বত ও আহঃ বলে উঠলো।
ছেলে অবাক হয়ে বলে উঠলো। তুমি কে?
সাথে সাথে পর্বতের কোথাও থেকে বলল। তুমি কে?
তারপর সে চিৎকার করে পর্বতকে বলল, 'আমি তোমার প্রশংসা করি।'
পর্বত ও সাথে সাথে উত্তর দিল, 'আমি তোমার প্রশংসা করি।'
উত্তর পেয়ে রাগান্বিত হয়ে ছেলেটি চিৎকার করে বলল, 'কাপুরুষ'।
পর্বত ও বলল, 'কাপুরুষ।'
এবার সে তার বাবাকে বলল, 'এসব কি হচ্ছে?'
বাবা ছেলের কথা শুনে একটু হাসলো এবং বলল, 'মনোযোগ দিয়ে শুনো বাবা'।
বলে এবার তিনি উচ্চস্বরে বললেন,' তুমি চ‍্যাম্পিয়ন'।
সাথে সাথে পর্বত বলে উঠলো, ' তুমি চ‍্যাম্পিয়ন'।
ছেলেটি অবাক হলো, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না।
এবার বাবা বলল, ' এটাকে মানুষ প্রতিধ্বনি বলে। কিন্তু এটাই বাস্তব জীবন।'
এ জীবনে তুমি যা কিছু করবে বা বলবে তা তোমার কাছেই ফিরে আসবে। আমাদের জীবনটা   শুধুমাত্র আমাদের কাজের প্রতিফলন।
যদি তুমি পৃথিবীতে অনেক ভালোবাসা পেতে চাও, তাহলে তোমার হৃদয়ের মধ্যে অনেক ভালোবাসা তৈরি করা।
যদি তুমি তোমার দলকে অনেক কর্মদক্ষতা সম্পন্ন দেখতে চাও, তাহলে তোমার নিজের মধ্যে আগে কর্মদক্ষতা তৈরি কর।
এ সম্পর্কটা সব জায়গাতেই প্রযোজ‍্য , জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।
তুমি যাকিছু কর, তোমার জীবনে তা কোন না কোনভাবে ফিরে আসবেই।

জীবনটা কাকতালীয় কোন ব্যাপার নয়। এটা তোমার কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন।

৩১